কর্মব্যস্ত জীবনে সারা সপ্তাহ অফিসের কাজের পর বাসার কাজগুলো জমতে থাকে ছুটির দিনগুলোর জন্য। তাই ছুটির দিনে গৃহস্থালি কাজের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় অনেককেই। তার উপর কাপড় ধোয়ার ব্যাপারটা যেন আরও কঠিন করে দেয় জীবন। সারা সপ্তাহের জমে থাকা নোংরা কাপড়, তার উপর একেক জামা ধোয়ার নিয়ম একেক রকম। এই দুশ্চিন্তা যেন কাপড় ধোয়াকে করে তোলে আরো দুর্বিষহ। এই সমস্যার সমাধানে ওয়াশিং মেশিন থাকাটা খুবই সাশ্রয়ী এবং কার্যকর। আপনিও কি ভাবছেন, এবার কিনেই ফেলবেন ওয়াশিং মেশিন? কাপড় ধুতে আর নিতে চাচ্ছেন না বাড়তি ঝামেলা?
কিন্তু কোন ওয়াশিং মেশিনটা ভালো হবে? দাম দিয়ে ঠিক জিনিস আনতে পারবেন তো? এসব নিয়ে আর নেই দুশ্চিন্তা। আপনাদের এই সমস্যা সমাধানে কিছু কার্যকরী সমাধান জেনে নিন এখনই।
১. ব্র্যান্ড সম্পর্কে সঠিক ধারণা
আপনি যদি না বুঝে যেমন-তেমন ওয়াশিং মেশিন কিনে ফেলেন, তবে পরবর্তীতে পোহাতে হতে পারে নানা রকম ঝক্কি-ঝামেলা। যেমন- বাড়তি বিদ্যুৎ ও পানির বিল, ঘন ঘন সার্ভিসিং করানো, জামা-কাপড় নষ্ট হওয়াসহ আরো নানান সমস্যা।
বর্তমান বাজারে ওয়াশিং মেশিনগুলো চমকপ্রদ সব সুবিধা নিয়ে এসেছে। কষ্টের টাকায় তাই চেষ্টা করুন ভালো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট কেনার। বর্তমান বাজারে ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে আপনার বাজেট অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন পছন্দের ওয়াশিং মেশিন।
আর ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে দেখতে ভালো লাগে ব্যাপারটি এড়িয়ে চলুন।
২. ফ্রন্ট লোডার নাকি টপ লোডার
ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় কোনটা বেছে নিবেন, ফ্রন্ট লোডার নাকি টপ লোডার? আমাদের অনেকেরই হয়তো দুটির পার্থক্য সম্পর্কে জানা নেই। কেনার আগে তাই চলুন এ দুটোর মধ্যে পার্থক্যগুলো জেনে নেয়া যাক-
টপ লোডার
কাপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলতে পারে। কম দামে কিনতে পারবেন। সাথে আছে কিস্তির সুবিধা। ওজনে হালকা, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরানো সহজ।
তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন- কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে মসৃণতা নষ্ট হবার চান্স থাকে। বেশি পানির প্রয়োজন পড়ে। বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়।
ফ্রন্ট লোডার
ফ্রন্ট লোডারের সুবিধা হচ্ছে, এটি কাপড়ের মসৃণতা ঠিক রেখে ধুতে পারে। অল্প পানিতেই কাপড় ধোয়া যায়। ডিটারজেন্ট কম লাগে। এছাড়া রয়েছে কিছু অসুবিধাও। যেমন- কাপড় ধুতে অনেক সময় নেয়, ৩ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায়। দাম তুলনামূলক বেশি থাকে। ওজনে ভারী হওয়ায় সহজে অন্য জায়গায় নেয়া যায় না
তবে বড় পরিবারের জন্য ভালো হয় টপ লোডার ওয়াশিং মেশিন, কারণ সেটার ধারণক্ষমতা বেশি থাকে। অন্যদিকে ছোট জায়গার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট লোডার কেনা ভালো। যদিও আমাদের দেশে টপ লোডার কেনার চাহিদা বেশি, তাই যথেষ্ট কম দামের সাথে কিস্তিতেও এটি কেনা যায়।
৩. কতটুকু ধারণক্ষমতা রয়েছে
সাধারণত ওয়াশিং মেশিনগুলোর ধারণক্ষমতা ৪.৫ কেজি থেকে ১০ কেজির বেশি হয় না। তাই এমন মেশিন কিনতে হবে যাতে পরিবারের সাথে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এক্ষেত্রে বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন কোনটা কিনলে ভালো হবে আপনার জন্য।
ওয়াশিং মেশিন-এর ধারণ ক্ষমতা কেনার ক্ষেত্রে বিবেচনায় ৩টি বিষয় মাথায় রাখবেন-
- 1
১। আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা।
- 2
২। প্রতিদিন কী পরিমাণ কাপড় ধুতে হয়।
- 3
৩। এবং দিনে কতবার ব্যবহার করবেন।
৪. চাইল্ড-লক সিস্টেমের ব্যবস্থা
কিছু মেশিনে চাইল্ড-লক ফাংশন থাকে। এটি ওয়াশারের দরজাতে লাগানো থাকে। অনেক ওয়াশিং মেশিন অন থাকা অবস্থায় এটি খোলা যায়, অনেকগুলোতে যায় না। যে বাড়িতে বাচ্চা আছে, সেখানে ওয়াশিং মেশিনের চাইল্ড লক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কৌতূহলী বাচ্চাদের লক নিয়ে খেলার একটা প্রবণতা থাকে, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ওয়াশিং মেশিন-এর লক সিস্টেমের ব্যাপারটি নিশ্চিত করে ওয়াশিং মেশিন কিনতে হবে। যাতে আপনার শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
৫. ওয়ারেন্টির সাথে অন্যান্য বিষয়ের নিশ্চয়তা
ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় মটর ওয়ারেন্টির বিষয়টি মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় অবশ্যই লক্ষ্য করবেন, ঐ প্রতিষ্ঠান কত বছরের মটর, সার্ভিস এবং স্পেয়ার পার্টসের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। ব্র্যান্ড এবং মডেলভেদে মটর সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে।
আশা করছি, উল্লেখিত ৫টি তথ্য আপনার এই কর্মব্যস্ত জীবনকে সহজ করে তুলবে এবং সাধ্যের মাঝে আপনাকে সেরা ওয়াশিং মেশিনটি কিনতে সাহায্য করবে।